গ্যাংটকে গন্ডগোল (পর্ব-১) [ঢাকা থেকে সিকিম যাত্রা]

মূল পাতা / ভ্রমণ ব্লগ / গ্যাংটকে গন্ডগোল (পর্ব-১) [ঢাকা থেকে সিকিম যাত্রা]

গ্যাংটকে গন্ডগোল (পর্ব-১) [ঢাকা থেকে সিকিম যাত্রা]

প্রকাশকালঃ May 3, 2020 বিভাগঃ বিদেশ ভ্রমণ

ভারত ভ্রমণের পরিকল্পনা ছিলো ২০১৫ সাল থেকেই সময় এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে প্রত্যেকবারই কাছে এসেও মিস করতে হয়েছে! এমনকি যাবো যাবো করে পাসপোর্টেরও মেয়াদ পর্যন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে ১ বার! ভাবা যায়? তারপর ই-পাসপোর্টের নেশায় কিছুদিন অপেক্ষা করে যখন বুঝতে পারলাম আমি তো বাংলাদেশেই বসবাস করছি তখন দ্রুত পাসপোর্ট রিনিউ করেই ভিসা লাগিয়ে নিলাম। পণ করেছি এবার আর কারো জন্য অপেক্ষা নয় প্রয়োজনে একা যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ ক্লোজ বন্ধু বান্ধবদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েও যখন কারো সিডিউল মিলল না একা যাওয়ার পরিকল্পনা যখন একেবারেই সন্নিকটে তখনই ফেইসবুকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম ট্যুর গ্রুপ বিডি তে নিজে পোস্ট দিলাম সেখান থেকে কয়েকজনের সাথে কথা হলেও পোর্ট এবং সময় না মিলায় কথা এগুলো না। তারপর হঠাৎ একদিন আলামিন রাজুর পোস্ট পেলাম সেও যাচ্ছে চেংরাবন্দা হয়ে সিকিম ব্যাস কমেন্টস করলাম এড হবো এবং সেখান থেকেই আমাদের ৬ জনের অপরিচিত মুখ পরিচিত হতে শুরু করলো।
কি আশ্চার্যের বিষয় আমরা মাত্র ৫-১০ দিনেই মনে হলো অনেক দিনের পরিচিত হয়ে গেলাম, কিভাবে কি করতে হবে, কি প্ল্যান সবাই সাজাতে লাগলাম। অনেকক্ষণ আপনাদের কিছুটা ব্যক্তিগত কথা শুনিয়ে ফেলেছি মনে হয়! এবার আসি কেমন ছিলো আমাদের সিকিম ভ্রমণ যাত্রা তার বিবরণে…

ঢাকা-টু-বুড়িমারী
অবশেষে এল আমাদের যাত্রার তারিখ ২৩/১২/২০১৯ J আমরা অন্তত ১০ দিন আগে টিকেট ক্রয় করে রেখেছিলাম হানিফ পরিবহনের নন এসি ভাড়া ৬৫০/- করে। শীতকাল হওয়াতে নন এসিটাই ঠিক ছিলো। রাত ৮ টার গাড়িতে চড়ে আমরা বগুড়ার জ্যাম খেয়ে সকাল ১০ টার দিকে বুড়িমারি বর্ডার এ হাজির হলাম।

ইমিগ্রেশন
বুড়িমারি গিয়েই আমরা কোন ঝামেলা ছাড়াই পার হওয়ার জন্য একজনকে পোর্ট ফি ৫০ টাকা সহ কিছু টাকা দিয়ে দেই সেই আমাদের সিরিয়াল দিয়ে দেয় ব্যসিকালী আমরা সবাই নতুন ছিলাম বিধায়ই দালাল বলি আর যাই বলি তাদের দিয়েছি কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এখন আমি বলবো অন্তত যাওয়ার সময় কাউকেই ধরার দরকার নেই আপনি নিজেই ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করতে পারবেন সহজেই। [ট্রাভেল ট্যাক্স ঢাকা থেকে দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন]
বাংলাদেশ সাইডে ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করে পাসপোর্ট নিয়ে আপনি এখন চলে যান ইন্ডিয়া সাইড চেংরাবান্ধায় সেখানেও সেইম পাসপোর্ট জমা দিয়ে অপেক্ষা করুন তারা প্রসেস শেষ করে আপনাকে এন্ট্রি সিল দিয়ে দিবে। এখানেও আমরা ১০০ টাকা করে দিয়েছিলাম এটা পারলে দিয়ে দিবেন যদি আপনি ডলার এন্ড্রোসের চাইতেও বেশি টাকা নিয়ে যান সাধারণত তারা তেমন কিছু জিজ্ঞেস করেনা কিন্তু অহেতুক ঝামেলা এড়িয়ে ১০০ টাকা দিয়ে ভালোভাবে চলে যাওয়াই ঠিক মনে করি। তবে যদি জিজ্ঞেস করে টাকা আছে কিনা বলবেন যতটুকো আছে সেটাই কোন সমস্যা নাই। মিথ্যা কথা বলার কোন দরকার নাই।
ঢুকেই এবার আপনার কাজ হচ্ছে মূলত ডলার এবং টাকাকে রূপিতে রূপান্তর করা বর্ডারে সাধারণত সিন্ডিকেট থাকে যে রেট লেখা থাকবে সেটা দিয়েই আপনাকে ভাঙ্গাতে হবে তবে একটু বেশি পাবেন কথা বললে সেক্ষেত্রে কোন রিসিট দিবেনা এটার দরকারও নেই আপনার। কলকাতার তুলনায় এখানে একটু রেট কম পাবেন। রুপি করে নেওয়ার পর আপনি এবার ইন্ডিয়ান নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে চাইলে সীম কিনে নিতে পারেন কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে সীম এয়ারটেল আর ভোদাফোন এই দুইটাই পাবেন জিও পাবেন না। সীম অবশ্যই পাসপোর্ট এর ফটোকপি দিয়ে সম্পূর্ণ নিজের নামে কিনবেন। সীম ক্রয় করতে বেশ ভালোই সময় যায় প্রায় ২০-৩০ মিনিট অনেকগুলো প্রসেস সম্পূর্ণ করতে হয়। যায়গা ভেদে সীমের দাম বিভিন্ন হয় বর্ডারে ৫০০ রুপি নেয়, শিলিগুড়িও ৫০০ রুপি নিবে। গ্যাংটকে আমাদের একজন ৩৫০ রুপি দিয়ে কিনেছিলো কিন্তু সব সময় এই সীম থাকেনা।
বি:দ্র: টাকা/ডলার ভাঙ্গানোর সময় অবশ্যই ৫০০ এবং ২০০০ রুপির নোট দেখে নিবেন কোন ময়লা কিংবা লেখা আছে কিনা এটা নিলে আপনি চালাতে পারবেন না আর।

চেংরাবান্দা-টু-এসএনটি, শিলিগুড়ি
চেংরাবান্দা থেকে আপনি ৭ জনের গাড়ি আর ৪ জনের গাড়ি পাবেন ৪ জনের গাড়ি ১৪০০ থেকে ১৫০০ রুপি আর ৭ জনের গাড়ি ২৬০০ -৩০০০ রুপির মতো চাইবে। আমরা ৮ জন দুটো মারুতি সুজুকি নিয়েছিলাম ২৫০০ রুপি দিয়ে। চেংরাবান্দা থেকে এসএনটি পৌঁছাতে ২.৩০ ঘন্টার মতো সময় লাগে।

এসএনটি, শিলিগুড়ি- গ্যাংটক
এসএনটি পৌঁছে এসএনটির সিকিম সরকারের অফিস থেকে ফর্ম কিনে পাসপোর্ট ছবি সহ জমা দিন এখানকার সবাই খুবই হেল্পফুল তারা আপনাকে সব ধরনের হেল্প করবে। যতজন থাকবেন সবাইকে যার যার স্বাক্ষর দিতে হবে ওখানে, যে কয়দিন থাকবেন বলে প্ল্যান করছেন তার চাইতে আরো ২/৩ দিন বেশি অনুমতি নিন। যে কয়জন থাকবেন সবার অনুমতি একটা পেপারেই দিবে চাইলে আপনারা সেটার একটা জেরক্স কপি করে রাখতে পারেন।
সিকিম যাওয়ার বাস এবং জীপ এখান থেকেই ছাড়ে আপনি যদি ১ টার আগে এসএনটি পৌঁছান তবে আমি বলবো গিয়েই আগে এসি বাসের টিকেট কেটে নিন মাত্র ১৫০ রুপি। যেখানে জীপে যেতে গেলে আপনার ৪০০ থেকে ৫০০ রুপি খরচ হবে। তবে নিজেরা ১০ জন হলে ভিন্ন একটা ম্যাক্স গাড়ি ঠিক করুন আশাকরি ৩০০-৩৫০ রুপি করে হয়ে যাবে পার পারসন। তাদের সাথে দরদাম করতে হবে একেকজন একেক রকম ভাড়া বলতে পারে তবে আপনি পুরো গাড়ি নিলে ভাড়া পড়বে ৪০০০-৫০০০ রুপির মতো এতে করে ১০ জন যাওয়া যায়।
এখানে বলে রাখি ভুলেও শিলিগুড়ির দালালদের খপ্পরে পা দিবেননা এরা আপনাকে পুরো প্যাকেজ নিতে বলবে যেটা আপনি কোন কিছু না দেখে শুনেই বেশি দাম দিয়ে ঠিক করতে হবে। তবে আপনার যদি পূর্ব পরিচিত কোন হোটেল বা কারো কাছ থেকে আগে থেকেই জেনে থাকেন যাদের হোটেল ফ্যাসিলিটি এবং আপনাকে ঘুরানোর কাজটি ভালোভাবে করবে এবং আপনার বাজেটের মধ্যে থাকে তবে তাদের সাথে কথা বলে আগেই বুক করতে পারেন।

এখানে বলে রাখি আমরা ৬ জনের টিম শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক হোটেল, লাচুং, লাচুং হোটেল, ইয়ামথাম ভ্যালি, জিরো পয়েন্ট, সাঙ্গু লেক এর সাথে ২ টা লাঞ্চ, ১ টা ডিনার, ১টা ব্রেকফাস্ট সহ ছিলো – ২৬৫০০ রুপির মতো ।

এবার শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পালা বিকাল ৩টার পর আর সিকিমের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়েনা, কারন রাত ৮ টার মধ্যে রাংপোতে গিয়ে আপনাকে অনুমতি নিতে হবে। সেটা বিবেচনা করেই শিলিগুড়ি থেকে রওনা হওয়া উচিত।

রাংপো পৌঁছে আপনি এসএনটি থেকে পাওয়া অনুমতি পত্র এবং পাসপোর্ট জমা দিলে তারা আপনার পাসপোর্টে সীল দিয়ে দিবে। তারপর আবার জার্নি শুরু গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে এখন থেকেই আপনি থ্রিল অনুভব করতে শুরু করবেন 😁
আপনি যত দ্রুত গ্যাংটকের এমজি মার্গ পৌঁছাবেন তত আপনার হোটেল খোঁজা এবং তাদের সাথে প্যাকেজ দরদাম করার সুবিধা হবে। তাই শিলিগুড়ি সময় নষ্ট করার কোন চেষ্টা করবেন না, যদি প্যাকেজ বা হোটেল ঠিক করা না থাকে। প্রচুর হোটেল আছে তাই অহেতুক প্যানিক নেওয়ার কোন কারন নেই। একটু কষ্ট হবে হয়তো তবে আপনি যদি ভ্রমণের আনন্দ নিতে চান তবে একটু কষ্ট তো করতেই হবে, হোটেলের রুম দেখার আগে দেখবেন গীজার আছে কিনা 😜 এবং তা কাজ করে কিনা।

আজ এ পর্যন্তই পরের পর্বে থাকবে সিকিমের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা এবং গ্যাংটকের পাশ কাটিয়ে যাওয়া আঁকা বাকা পথের সেই সাঙ্গু লেকের সেই গন্ডগোলের কথা 🤩👌

বি:দ্র: বানান এবাং ভাষাগত ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
চলবে…..

Language