মেঘের দেশ সাজেক ভ্যালি, রাঙ্গামাটি

মূল পাতা / দর্শনীয় স্থান / চট্টগ্রাম / রাঙ্গামাটি / মেঘের দেশ সাজেক ভ্যালি, রাঙ্গামাটি

মেঘের দেশ সাজেক ভ্যালি, রাঙ্গামাটি

প্রকাশকালঃ May 1, 2020

কৃতজ্ঞতায়ঃ মহিদুল ইসলাম মুক্ত

সাজেকে সর্বত্র মেঘ , এটিকে বলা যায় মেঘের রাজ্য। আপনি যদি সেখানে যান, তাহলে আপনার মনে হবে, আপনি মেঘের উপরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনি হয়তো বসে আছেন, কিন্তু আপনার পায়ের নীচে খেলা করছে মেঘেরা।

পাহাড় আর সবুজের দারুণ মিতালী চোখে পড়ে । রূপসী বাংলা বর্ণনাতীত রূপের একটি ঝলকের নাম সাজেক ভ্যালী। আপনার যদি কখনো মেঘের দেশে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা হয়, তাহলে আপনি যেতে পারেন এই সাজেক ভ্যালিতে। ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক ভ্যালি ।

এখানে তিনটি হেলিপ্যাড বিদ্যমান ; যা থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায় । সাজেকে একটা ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হচ্ছে এখানে ২৪ ঘণ্টায় প্রকৃতির তিনটা রূপই দেখা মিলে । কখনো খুবই গরম , একটু পরেই হটাৎ বৃষ্টি এবং তার কিছু পরেই হয়তো চারদিকে ঢেকে যায় মেঘের চাদরে ; মনে হয় যেন একটা মেঘের উপত্যকা ।

সাজেক এর শেষ গ্রাম কংলক পাড়া। এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া। এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে ট্রেকিং করে কংলাক পাহাড়-এ যাওয়া যায় ।

কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া । কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড় , আদিবাসীদের জীবনযাপন , চারদিকে মেঘের আনাগোনা পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয় । বছরের নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত উপজাতিয় উৎসব এবং তাদের সংস্কৃতির নানা উপকরণ পর্যটকরা উপভোগ করতে পারেন ।

সাজেক বিজিবি ক্যাম্প এর পর আর কোন ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তা জনিত কারণে কংলক পাড়ায় মাঝে মাঝে যাওয়ার অনুমতি দেয় না। ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন।

ঢাকা থেকে দূরত্ব

৩৩৬ কিলোমিটার।

যাতায়াত

তাই প্রথমেই আপনাকে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যেতে চাইলে সৌদিয়া, শ্যামলি, শান্তি পরিবহন, এস আলম, ঈগল ইত্যাদি বাসে করে যেতে পারবেন। রাত ১০ টার মধ্যে বাসগুলো সাধারণত খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। শান্তি পরিবহন বাস সরাসরি দীঘিনালা যায়, ঢাকায় গাবতলী থেকে। এছাড়াও বিআরটিসি ও সেন্টমার্টিন পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায়।

খাগড়াছড়ি আর সাজেক এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি থেকে অথবা দীঘিনালা থেকে জীপগাড়ি (লোকাল নাম চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে একদিনে সাজেক ভ্যালী ঘুরে আসতে পারবেন। এক গাড়িতে করে ১২-১৫ জন যেতে পারবেন।

তবে লোক কম থাকলে অন্য কোন ছোট গ্রুপের সাথে কথা বলে শেয়ার করে গাড়ি নিলে খরচ কম হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে সিএনজি দিয়ে সাজেক যেতে পারবেন। তবে পাহাড়ি উঁচু নিচু রাস্তা বলে সিএনজি দিয়ে ভ্রমণ না করাই ভালো।

খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা গিয়ে সাজেক যেতে পারবেন। বাসে দীঘিনালা জন প্রতি ৪৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলে জন প্রতি ভাড়া ১০০ টাকা। দীঘিনালা থেকে ১০০০-১২০০ টাকায় মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন।

ফেরার সময় অবশ্যই সন্ধ্যার আগে আপনাকে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প পার হতে হবে। তা না হলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। ক্যাম্পের ছবি তোলা নিষেধ এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন।

চট্রগ্রাম থেকে সাজেক ভ্রমণ

চট্রগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি বা দিঘীনালা হয়ে সাজেক যেতে পারবেন। চট্রগ্রামের কদমতলী থেকে বিআরটিসি এসি বাস সারাদিনে ৪টি বাস চলাচল করে, ভাড়া ২০০টাকা । এছাড়া অক্সিজেন মোড় থেকে ১ ঘণ্টা পর পর শান্তি পরিবহনের (ভাড়া ১৯০টাকা) বাস চলাচল করে। চট্রগ্রাম থেকে বাসে করে খাগড়াছড়ি যেতে সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা।

রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক ভ্রমণ

রাঙ্গামাটি থেকে নৌপথ এবং সড়কপথ উভয়ভাবেই বাঘাইছড়ি যাওয়া যায়। রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭ টা ৩০ থেকে ১০টা ৩০ এর মধ্যে লঞ্চ ছাড়ে যেতে আর সময় লাগে ৫-৬ ঘন্টা। জনপ্রতি ভাড়া ১৫০-২৫০ টাকা।

রাঙ্গামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭ টা ৩০ থেকে ৮ টা ৩০ ঘটিকার মধ্যে বাস ছাড়ে, জনপ্রতি ভাড়া নেয় ২০০ টাকা। সময় লাগে ৬-৭ ঘন্টা। এছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকেও সরাসরি বাঘাইছড়ি যাওয়া সম্ভব। বাঘাইছড়ি থেকে জীপ (চাদেঁর গাড়ি) অথবা মোটর সাইকেলে সাজেক ভ্যালীতে পৌঁছানো যায় এতে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৩০০/-টাকা।

যানবাহনের সময়সূচি

নন এসি বাসঃ

  • সোনিয়া শান্তি
  • এস আলম সার্ভিস
  • শ্যামলী পরিবহন(এন আর)
  • শ্যামলী পরিবহন(এসপি)
  • শান্তি পরিবহন
  • ইকোনো সার্ভিস
  • ঈগল পরিবহন
  • ইয়ার ৭১

বাসের ভাড়া পড়বে ৪২০ টাকার মতো।

এসি বাসঃ

শান্তি পরিবহন – ইকোনো ৯০০ টাকা, বিজনেস ১০০০ টাকা
সেইন্টমার্টিন হোন্দায় – ১২০০ টাকা
ঈগল পরিবহন – ৮৫০ টাকা
হানিফ এন্টারপ্রাইজ -১০০০ টাকা
রিলেক্স ট্রান্সপোর্ট – ১১০০ টাকা
BRTC এসি বাস (চট্টগ্রাম) কদমতলীঃ ০১৬৮২৩৮৫১২৫ খাগড়াছড়িঃ ০১৫৫৭৪০২৫০৭

বিশেষ খাবার

সাজেকে গেলে কিছু খাবার অবশ্যই ট্রাই করা উচিৎ এর মধ্যে রয়েছে, ব্যাম্বো চিকেন, ব্যাম্বো বিরিয়ানি। এছাড়া বন মরগ ভাগ্য ভালো হলে পেতে পারেন। রাতে বার্বিকিউ করতে পারবেন যোকোনো হোটলে বলেই। খাবারের দাম তুলনা মুলক বেশী। এসকল খাবারের পাশাপারি পাবেন সাধারন খাবার যেমন আলুভর্তা, ডিম, মুরগী রান্না ইত্যাদি। খাবার আগে থেকে ওর্ডার দিতে হবে না হলে অনেক সময় পাওয়া যায় না। এছাড়া আদিবাসী ঘরেও খাওয়া যায়, আগে থেকেই বলে রাখতে হবে কি খাবেন, তাহলে রান্না করে দিবে। সাজেকে খুব সস্তায় পেঁপে, আনারস, কলা ইত্যাদি ফল পাবেন চেখে দেখতে ভুল করবেন না।

হোটেল

  • রিসোর্ট রুংরাং
    01884-710 723

  • সাজেক রিসোর্ট
    01859-025694 / 01847-070395 / 01769-302370

  • রুন্ময় রিসোর্ট
    0186547688

  • মেঘ মাচাং
    01822-168877

  • জুমঘর ইকো রিসোর্ট
    01884-208060

  • লুসাই কটেজ
    01634-198005

  • মেঘ পুঞ্জি রিসোর্ট
    01815-761065

  • আলো রিসোর্ট
    01841-000645

  • আদিবাসী ঘর

সাবধানতা

বর্ষার সময় পাহাড় ধসের আশংকা থাকে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়।তখন প্রশাসন পাহাড়ী এলাকায় ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এছাড়া গিরিপথে ঝর্ণার পানি তুলনামূলক বেড়ে যায় এবং পথ কর্দমাক্ত থাকে। তাই পর্যটকদের ভালো মানের গ্রিপযুক্ত ট্র্যাকিং জুতা ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয় এবং সর্তকতা অবলম্বন করতে বলা হয়।

ভিডিও

খরচ পর্যালোচনা

ঢাকা থেকে নন এসি এইসব বাস ভাড়া ৫২০ টাকা।
এসি বাসে যেতে চাইলে বিআরটিসি ও সেন্টমার্টিন পরিবহনে ৭০০ টাকা
শান্তি পরিবহন, ভাড়া ৫৮০ টাকা।

জীপগাড়ি/চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ যাওয়া আসা সহ দুইদিনের জন্যে ভাড়া নিবে ৮,০০০-১০,০০০ টাকা।
সিএনজি দিয়ে সাজেক যেতে পারবেন, রিজার্ভ ভাড়া লাগবে ৪০০০-৫০০০ টাকা।

খাওয়া দাওয়া সাধারন খবার প্রতি বেলা ১০০- ২০০ টাকা।

টিপস এন্ড ট্রিকস

  • ছুটির দিন গুলোতে আগে থেকেই টিকেট কেটে রাখা ভালো ।
  • সাজেকে শুধুমাত্র রবি, এয়ারটেল এর নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়।
  • সাজেকে বিদুৎ নেই, সাথে করে পাওয়ার ব্যাংক রাখতে পারেন। কোণ কোন হোটেলে খাবার সময় ফোন চার্জ করতে পারবেন। জেনারেটর দেয়।
  • আদিবাসীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে তাদের অনুমতি নিয়ে নিন।
  • যাবার পথে কয়েক জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প আছে। সেখানে ভ্রমণকারী সদস্যদের কিছু তথ্য জমা দিতে হয়। নিরাপত্তার সার্থে তাদের সহযোগিতা করুন। সাথে করে নিজের জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি রাখুন।
  • দুই তিন দিনের জন্যে গেলে গাড়ি বসিয়ে না রেখে, শুধু যাবার জন্যে গাড়ি ঠিক করুন, ফিরে আসার সময় অন্য কোন গাড়িতে আসুন কিংবা দিঘীনালা থেকে ফোন করে গাড়ি পাঠিয়ে ফেরত আসতে পারবেন।

উপরের তথ্য সম্পর্কে মতামত দিন, কোন তথ্য ভুল থাকলে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ।
Language