সেনাপতির দীঘি মাদারীপুর
সেনাপতির দীঘি মাদারীপুর জেলার খতিয়ান ও আমড়াতলা এর মধ্যবর্তী কালকিনি উপজেলাতে অবস্থিত। মাদারীপুরের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শটি এটি।
1965 সালের 24 ডিসেম্বর শায়েস্তা খাঁর বড় ছেলের বিশ্বস্ত সেনাপতি ইসলাম খা প্রায় 15 একর জমি জুড়ে 60703 বর্গমিটারের এ দীঘি খনন করেন। শায়েস্তা খানের বড় ছেলের নাম হচ্ছে বুজুর্গ উমেদ খা।
জনো মুখে শোনা যায় যে, শায়েস্তা খানের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের জলদস্যুদের বিতাড়িত করে ঢাকা ফিরে আসার উদ্দেশ্যে রওনা হলে মাঝপথে কালকিনি উপজেলায় গলিগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থান করেন।
এলাকার নাম হচ্ছে আমড়াতলা ও খতিয়াল। ওই এলাকা গুলোতে পানির অভাব ছিল। তাই ঐখানে অবস্থিত সাধারণ মানুষের পানির অভাব পূরণের জন্য এই সেনাপতির দীঘি মাদারীপুর খনন করেন। আর খননের দায়িত্ব পায় তার সেনাপতি। তার নাম অনুসারে টিকিট ইনাম করা হয় সেনাপতির দীঘি।
দীঘি প্রায় তিন শত বছরের পুরনো। মোগল আমলের একটি নিদর্শন বটে। তাই বিভিন্ন ছুটির দিনে অনেক দর্শনার্থীরা ঘুরতে আসে এবং পিকনিক করতে আসে।
দীঘি দৈর্ঘ্য প্রায় 288 মিটার এবং প্রস্থ 157 মিটার। তাছাড়া প্রতিটি পাড়ের উচ্চতা প্রায় 13.5 মিটার পর্যন্ত। ঐতিহাসিক এই পুরোনো দিঘির নিয়ে নানারকম লোকো কথা রয়েছে। দীঘিটির চারদিকে বাঁশ দিয়ে ঘেরা।
এখানকার পানি নাকি কখনো শুকায় না। দীঘিটি খনন এর পর প্রথমে পানি না ওঠায় এখানে ঘোড়দৌড়ের আয়োজন করা হয়েছিল। ঘোড়া দৌড় চলাকালীন সময়ে দক্ষিণ প্রান্ত এক অংশ থেকে পানি উঠতে শুরু করে এবং মুহূর্তে দীঘিটি পানিতে ভরে যায়।
এককালে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য দিঘির কাছে থালা বাসন চাইলে রাতে নাকি থালা-বাসন দিঘী থেকে উঠে আসতো। আবার অনুষ্ঠান শেষে, পারে রেখে আসলে তা আবার ফেরত নিত।
এমনটাই রয়েছে লোকো কথা। তবে কালকিনি উপজেলার স্থানীয় হিন্দুরা মনে করেন এর পানিতে রোগ প্রতিরোধ এর বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে।
ঢাকা থেকে দূরত্ব
ঢাকা থেকে সেনাপতির দিঘির দূরত্ব 192 কিলো
যাতায়াত
ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও গাবতলী থেকে সরাসরি মাদারীপুর বাস সার্ভিস রয়েছে। গাবতলী থেকে চন্দ্রা, সোহেল পরিবহন ও সার্বিক বাসে করে মাদারীপুর যাওয়া যায়। গাবতলী থেকে বরিশাল গ্রামের যেকোনো বাসে করে মুস্তফাপুর নেমে, তারপর সেখান থেকে বাস / রিক্সাতে করে মাদারীপুর সদর এ যাওয়া যায়।
মাদারীপুর সদর থেকে 13 কিলোমিটার দূরে সেনাপতির দীঘি অবস্থিত।
মাদারীপুর সদর থেকে সেনাপতির দীঘি অটোরিক্সা করে যাওয়া যায়। মাদারীপুর পাথরিয়া পার রোড দিয়ে যেতে হবে।
নৌপথে চলাচল করতে পারবেন। ঢাকা সদরঘাট হতে মাদারীপুর রুটে লঞ্চ চলাচল করে।
যানবাহনের সময়সূচি
বাস গুলোর নাম হচ্ছে –
1. সার্বিক
2. চন্দ্রা
3. সোহেল পরিবহন।
লঞ্চ গুলোর নাম হচ্ছে- এমভি তরিকা এবং দীপরাজ।
বিশেষ খাবার
কালকিনি উপজেলার নিকটবর্তী তে গৌরনদীতে ভালো কিছু মানের রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন রকমের মজার খাবার পাওয়া যায়। তবে সঙ্গে খাবার নিয়ে যাওয়া ভালো।
হোটেল
-
হোটেল মাতৃভূমি
-
সুমন হোটেল
-
হোটেল পলাশ,
-
সৈকত হোটেল,
-
হোটেল সার্বিক ইন্টারন্যাশনাল
সাবধানতা
1. একা ঘুরতে না যাওয়া।
2. স্থানীয়দের সাথে বিবাদে না যাওয়া
3. দীঘিতে না নামা।
খরচ পর্যালোচনা
যাতায়াত খরচ- সেনাপতির দীঘি যাওয়ার খরচ 500 থেকে 600 টাকা পর্যন্ত।
থাকা বাবদ খরচ- কালকিনি উপজেলা তে থাকার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে মাদারীপুর সদরে বেশ কিছু হোটেল আছে সেখানে থাকা যায়। এতে খরচ হয় 700 টাকা থেকে 1500 টাকা পর্যন্ত।
খাবার বাবদ খরচ- প্রতিবেলার জন্য 100 টাকা থেকে 150 টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
টিপস এন্ড ট্রিকস
1. অবশ্যই বন্ধুবান্ধবের সাথে যাবেন। কেননা এটি পিকনিক পিকনিক স্পট হিসেবে বেশি যাওয়া হয়।
2. স্থানীয়দের সাথে এর লোকো কথা সম্পর্কে জানা। এতে নতুন রহস্য জানতে পারবেন।
3. মাদারীপুর অন্যান্য দর্শনীয় স্থান যেমন মিঠাপুর জমিদার বাড়ি, শকুনি লেক ইত্যাদি থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
উপরের তথ্য সম্পর্কে মতামত দিন, কোন তথ্য ভুল থাকলে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ।