সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ । এটি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ অবস্থিত।চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলা হতে 120 কিলোমিটার দূরে এই দ্বীপটি অবস্থিত। সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে লম্বা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সেন্টমার্টিন সর্বমোট 17 বর্গকিলোমিটার নিয়ে বিস্তৃত। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় নারিকেল জিঞ্জিরা।অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাংলাদেশের প্রথম পাঁচটি ভ্রমণ স্থানের মধ্যে জায়গা দখল করে নিয়েছে। অসীম নীল আকাশ জলের মিতালী ঢেউ সারি সারি নারিকেল গাছ এগুলো পর্যটক মানুষ কে ঘায়েল করে ফেলেছে।শুধু বাংলাদেশ থেকে নয় বিভিন্ন দেশ থেকেও এ জায়গাটি ভ্রমণ করতে আসে বিদেশীরা।এখানে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য টি উপভোগ করতে পারবেন।
নীলগিরি পাহাড় জানতে এখানে ক্লিক করুন।
ঢাকা থেকে দূরত্ব
ঢাকা থেকে দুরুত্ব সেন্টমার্টিন দুরুত্ব ৪০৩ কি.মি.
যাতায়াত
ঢাকা হতে সরাসরি টেকনাফ যাওয়া যায়।ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ স্টেশন থেকে সেন্টমার্টিন পরিবহন , এস আলম, মর্ডান লাইন ,গ্রীন লাইন ইত্যাদি বাসে সরাসরি টেকনাফের যাওয়া যায়। এ ভ্রমণ সাধারণত দশ থেকে বারো ঘন্টা হয়ে থাকে। বিভিন্ন বাসের এবং ক্লাস অনুযায়ী ভাড়া 900 থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। যদি সরাসরি সেন্টমার্টিন যেতে চান তাহলে ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ বাসে চলে যাওয়াই ভালো। রাত 8 টা থেকে 10 টার মধ্যে যাত্রা শুরু করলে পরের দিন ভোর আটটার মধ্যে পৌঁছানো যায়।
তাছাড়া ঢাকা থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ যাওয়া যাবে। এর মাঝে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন। এজন্য ঢাকা থেকে প্রতিদিন গ্রীনলাইন , সোহাগ, শ্যামলী সেন্টমার্টিন, হানিফ ইত্যাদি কক্সবাজার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে হবে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতিদিন জাহাজ চলাচল করে। জাহাজ গুলোর নাম হচ্ছে কেয়ারি সিন্ডবাদ, কেয়ারী ক্রুজ, এম ভি ফারহান, আটলান্টিক ইত্যাদি। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে মোট দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। জাজ এর বিভিন্ন কেবিন অনুযায়ী ভাড়া 50 থেকে 500 টাকা পর্যন্ত।
যে জাহাজে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়া হয় ওই জাহাজ এই সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ ফিরে আসতে হয়। সুতরাং দেরী করলে ফিরে আসাটা মিস হয়ে যাবে। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে নয়টা ত্রিশ মিনিট এ সেন্টমার্টিন উদ্দেশে ছেড়ে যায় এবং বিকাল তিনটা থেকে 30 মিনিটে তা ফেরত এসে পড়ে। সেন্টমার্টিন যাওয়ার সময় যে টিকেট কাটা হয় ফেরত টিকেট সহ করতে হয়।
যানবাহনের সময়সূচি
ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফে যাওয়ার যানবাহনগুলোর নাম হচ্ছে –
শ্যামলী ,সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল , এস আলম , মর্ডান লাইন ইত্যাদি।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে টেকনাফের যানবাহনগুলো হচ্ছে-
গ্রীন লাইন, সোহাগ, শ্যামলী ,হানিফ, সৌদিয়া ,এস আলম , সেন্টমার্টিন ইত্যাদি।
এ পরিবহন সাধারণত রাত আটটা থেকে দশটা মধ্যে কক্সবাজার সেন্টমার্টিন ভ্রমন যাত্রা শুরু করে ঢাকা থেকে। আর পৌঁছায় সকাল আটটা থেকে দশটার মধ্যে।
বিশেষ খাবার
সেন্টমার্টিন এর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ খাবারটি হচ্ছে ডাব। সেন্টমার্টিন এর ডাব খুব বিখ্যাত। এটি খেতে অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। যেই সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করুক না কেন একবার হলেও ডাব টেস্ট করা উচিত। এছাড়া সামুদ্রিক যে কোন মাছ খেতে পারবেন। যেমন ইলিশ, সুন্দরী পোয়া, রূপচাঁদা , লবস্টার ইত্যাদি। নিজের মতো করে মাছ কিনে হোটেলে বারবিকিউ করে নিতে পারবেন এই সুযোগ রয়েছে হোটেলগুলোতে।
এছাড়াও এখানে রয়েছে হোটেল রেস্টুরেন্ট। সেখান থেকেও মজার মজার সুস্বাদু খাবার খেতে পারবেন। কিছু গুলোর নাম দেওয়া হচ্ছে-হোটেল আল্লাহর দান ,বাজার বিচ, আসাম হোটেল, সেন্টমার্টিন, কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট, হাজী সেলিম পার্ক।
হোটেল
-
Blue Marine Resort
01817 060065 -
Coral View Resort
01980 004777 -
Praasad Paradise Resort
01995 539248 -
Neel Digante Resort
0173 005 1004 -
Labiba Bilas Resort
01700 969 212
সাবধানতা
১. রোহিঙ্গার জনিত কিছু সমস্যার কারনে এই এলাকায় মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি অত্যন্ত কম থাকে। কথা বলার সমস্যা বেশিরভাগই হয়ে থাকে। তবে টেলিটক অপারেটর অন্যদের তুলনায় ভালো কাজ করে।
২. সঠিক জায়গায় আবর্জনা ফেলবেন।
৩. জিনিসপত্র কেনার সময় অবশ্যই দরদাম করে কিনবেন।
৪. মানুষ বেশি হলে আগেই টিকিট কেটে রাখতে পারেন।
৫. কোনভাবেই দালালদের খপ্পরে পড়া যাবে না। যা করবেন নিজেই সব কিছু করে নিবেন।
৬. সমুদ্রের নামার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
৭. টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সময় জাহাজের দিক থেকেই সুন্দর ও মনোরম দৃশ্যের ভিডিও গুলো দেখতে পারবেন।
৮. কম খরচে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে চাইলে ছুটির দিনগুলো পরিহার করতে হবে।
৯. এলাকায় রাত বারোটার পর পর্যটকদের কাছে যেতে দেওয়া নিষেধ।
খরচ পর্যালোচনা
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ এর যাতায়াত খরচ
বাসের টিকেট- যাওয়া ও ফেরত আসা – ১৮০০ ঢাকা (ননএসি), ৩১০০-৩৫০০ টাকা পর্যন্ত। (এসি) ,জাহাজ ভাড়া- যাও ও ফেরত আসা- ৬০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত। ছেড়া দ্বীপ- ট্রলারে যাওয়া আসা 200 টাকা।
লোকাল যাত্রা- কোন কারণে যদি সেন্টমার্টিনের বাজার পাশে বসে যাওয়ার প্ল্যান থাকে তাহলে ভ্যান ভাড়া দিয়ে যেতে পারেন। ভ্যান ভাড়া 150 থেকে 200 টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
খাবার খরচ -প্রথম দিনের যাত্রা বিরতিতে রাতের খাবার ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। রাতের খাবার অথবা বারবিকিউ ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত হয়। প্রথম দিন- সকালের নাস্তা ৬০-১০০ টাকা, দুপুরের খাবার ১৫০- ২৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে
থাকার খরচ- রিসোর্ট কাপল রুম বেডে থাকার জন্য প্রতিরাত ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হয়। তবে বাজারের দিকে মিডিয়াম লেভেলের হোটেল পাওয়া যায়। যার ভাড়া ৮০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
টিপস এন্ড ট্রিকস
ভাটার সময় সাইকেল ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন ছেড়াদ্বীপ থেকে।
উপরের তথ্য সম্পর্কে মতামত দিন, কোন তথ্য ভুল থাকলে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ।