তাজহাট জমিদার বাড়ি রংপুর জেলার মাহিগঞ্জ এর তাজহাট গ্রামে অবস্থিত। রংপুর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে এটি । মনে করা হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে মান্নালাল তার ব্যবসায়িক কারণে মাহিগঞ্জে আসেন। আর সেখানে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি তাজহাট জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন । তার দত্তক পুত্র ছিলেন গোপাল লাল রায় বাহাদুর। তিনি মারা যাবার পর তার দত্তকপুত্র জমিদারি পরিচালনা শুরু করেন। বিংশ শতাব্দীতে গোপাল রায় বাহাদুর প্রায় 2000 রাজমিস্ত্রির নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে তাজহাট জমিদারবাড়ি পূর্ণতা দান করে। জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করতে তখনকার সময়ে দেড় কোটি টাকার মতো খরচ হয়।
জমিদার বাড়িতে চত্বরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছের সারি এবং প্রাসাদের দুই পাশে রয়েছে দুটি পুকুর। বিভিন্ন রকম ফুল ও কামিনী মেহেগুনি, আম, কাঠাল বাগান রয়েছে। তাজহাট জমিদার বাড়িটি দেখতে অনেকটা ঢাকা আহসান মঞ্জিল এর মতই দেখা যায়। চুনাপাথর এবং লাল ইট দ্বারা এ বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। বাড়িটির তৃতীয় এবং চতুর্থ তলায় জমিদার গোপাল রায় এর বিভিন্ন জিনিসপত্র রাখা আছে। এছাড়া রয়েছে গোসলখানা, থাকার কক্ষ ও অতিথিশালা। বাড়িটিতে সর্বমোট 31 টি সিঁড়ি আছে। রাজবাড়ী পিছনের দিকে রয়েছে গুপ্ত সিঁড়ি যা বর্তমানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
1995 সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই জমিদার বাড়িটি কে সংরক্ষণ স্থাপনা হিসেবে নথিভুক্ত করেন। তারপর রংপুর জাদুঘরকে 2005 সালে তাজহাট জমিদার বাড়ি দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করে।
রংপুর জাদুঘর ও তাজহাট জমিদার বাড়ি পরিদর্শনের সময়
গৃষ্ম কাল সময়ে রংপুর জাদুঘর অর্থাৎ তাজহাট জমিদার বাড়ি সকাল 10 টা থেকে বিকাল 6 টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালে সকাল 9 টা থেকে বিকাল 5 টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর দুপুর একটা থেকে একটা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মধ্যাহ্ন বিরতি দেওয়া হয়।
টিকিটের মূল্য
বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিকের জন্য 20 টাকা দিয়ে টিকিট নিতে হয়। মাধ্যমিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য 5 টাকা টিকেট নিতে হয়। এছাড়া পাঁচ বছরের কম বাচ্চাদের জন্য কোন টিকিট কাটতে হয় না। সার্কভুক্ত যেকোনো দেশের দর্শনার্থীদের জন্য এর মূল্য 100 টাকা। আর অন্যান্য বিদেশি দের জন্য 200 টাকা পর্যন্ত টিকেট নিতে হয়।
ঢাকা থেকে দূরত্ব
ঢাকা থেকে রংপুরের দূরত্ব মোট 340 কিলোমিটার
যাতায়াত
ঢাকা থেকে প্রথমে রংপুর যেতে হবে। ঢাকা থেকে রংপুরে সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে। বাস গুলো সাধারণত ঢাকার মহাখালী, গাবতলী এবং কল্যাণপুর বাস টার্মিনাল থেকে নিয়ম অনুসারে ছেড়ে যায়। রংপুর শহরে পৌঁছানোর পর রিক্সা করে তাজহাট জমিদার বাড়িতে যেতে হবে। রিকশা ভাড়া সাধারণত 20 টাকা লাগে। যদি ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম গামী বাসে চললে সরাসরি জমিদার বাড়ির সামনে নামা যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি 100 টাকা থেকে 1000 টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
যানবাহনের সময়সূচি
বাস গুলোর নাম হচ্ছে
- গ্রীন লাইন পরিবহন
- আলহামরা ট্রাভেলস
- মিম পরিবহন
- এস আর ট্রাভেলস
- কুড়িগ্রাম পরিবহন।
বিশেষ খাবার
রংপুর বিভাগীয় শহরে রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট । সেখান থেকে প্রতিদিনের খাবার খেয়ে নিতে পারেন। হোটেল গুলোর খাবার অনেক মজার এবং সুস্বাদু হয়। গরমকালে গেলে অবশ্যই হাড়িভাঙ্গা আম খেয়ে নেবেন।
হোটেল
-
হোটেল নর্থ ভিউ
052155405 -
পর্যটন মোটেল
052162111 -
দি পার্ক হোটেল
052165920 -
হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার
052165920 -
হোটেল তিলোত্তমা
02163482
সাবধানতা
কখনো স্থানীয়দের সাথে বিবাদে না জড়ানো এবং অপরিচিতদের সাথে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ কোন জিনিস হাতের স্পর্শ না করা।
খরচ পর্যালোচনা
তাজহাট জমিদার বাড়ি ভ্রমণ খরচ সমূহ
যাতায়াত খরচ সাধারণত 1200 টাকা থেকে 2000 টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রতিদিন থাকার জন্য হোটেল খরচ 700 টাকা থেকে 3000 টাকা পর্যন্ত হয়।
প্রতিবেলা খাবার খরচ 120 টাকা থেকে 200 টাকা পর্যন্ত লাগে।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এ খরচ পরিবর্তনশীল। তাছাড়া সুবিধা ভোগের উপর এ খরচ পরিবর্তন হয়।
টিপস এন্ড ট্রিকস
রংপুর গেলে এর আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে আসলে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করা যাবে। গরমকালে গেলে অবশ্যই হাড়িভাঙ্গা আম খেতে ভুলবেন না।
উপরের তথ্য সম্পর্কে মতামত দিন, কোন তথ্য ভুল থাকলে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ।